বৃহস্পতিবার, মার্চ ১০, ২০১১

সংবিধানে নেই 'মুক্তিযুদ্ধ'

নিউজ24 ডেস্কঃ- রাজনৈতিক মহলে এ যাবৎ 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি সর্বাধিক উচ্চারিত হলেও সংবিধানে নেই এর কোনো অস্তিত্ব। এমনকি বাহাত্তরের মূল সংবিধানেও 'মুক্তিযুদ্ধ' শব্দটি ছিল না। ১৫৩টি অনুচ্ছেদবিশিষ্ট বাংলাদেশের সংবিধান ১১টি ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে রয়েছে একটি প্রস্তাবনা ও চারটি তফসিল। এর কোথাও নেই এ শব্দটি। অথচ, সবার মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা! মুখে মুখে শুধু উচ্চারণই নয়, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে সৃষ্টি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ-বিপক্ষ বলে দুটি ধারার। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আর এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধ শব্দটির অধিকতর ব্যবহার করে চলেছেন সচেতন মহল বিশেষ করে রাজনীতিকরা। স্বাধীনতা লাভের পরপরই মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বগাথা সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বিতরণ করা হয় 'বীরশ্রেষ্ঠ', 'বীরউত্তম', 'বীরবিক্রম' ও 'বীরপ্রতীক' পদক। মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় কমান্ড কাউন্সিলটিও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চালিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য এ ছাড়াও গড়ে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মসহ বহু প্রতিষ্ঠান। মুক্তিযুদ্ধ শব্দের উল্লেখ না থাকা প্রসঙ্গে মূল সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'মুক্তিসংগ্রাম' বলে শব্দের উল্লেখ ছিল। তা কেটে ফেলা হয় ১৯৭৮ সালের দ্বিতীয় 'ঘোষণাপত্র' আদেশ নম্বর (৪)-এর দ্বিতীয় তফসিল জারির মাধ্যমে। যেখানে বলা হয়েছিল_ 'জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের' সেখানে 'জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের' কথাটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। অর্থাৎ স্বাধীনতা অর্জনের নেপথ্যে যে দীর্ঘ সংগ্রাম এবং একটা নেতৃত্ব ছিল, সেটা অস্বীকার করা হয়। তারা সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে যা যা পুনর্বহাল হয়েছে, তার মধ্যে সংবিধানের প্রস্তাবনা রয়েছে। আর সেই প্রস্তাবনায় রয়েছে জাতীয় চার মূলনীতি। সংবিধান সংশোধন সম্পর্কিত সংসদীয় বিশেষ কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি থাকলে ভালো হতো। মুক্তিসংগ্রাম কথাটির তাৎপর্যও কম নয়। বঙ্গবন্ধু বলতেন, মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও মুক্তির সংগ্রাম শেষ হয়নি_ এটা চলবে। সত্যিই আজও তা চলছে। সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদমতে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সব সময়ই কার্যকর ছিল। আর তাতেই অন্তর্নিহিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধ। সংবিধানের প্রস্তাবনা যে কখনো কেটে ফেলা যায় না সেটা আদালতের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। প্রশ্নের জবাবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদমতেই একটি অনুচ্ছেদ থাকবে যাতে উল্লেখ থাকবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের সরাসরি স্বীকৃতি। মুক্তিযুদ্ধ শব্দটি এভাবে ব্যবহারের বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে। কারণ প্রস্তাবনা পরিবর্তনের ক্ষমতা বর্তমান সংসদের যেমন নেই তেমনি ভবিষ্যৎ কোনো সংসদেরও থাকবে না। আদালতের রায়ে সে কথাই উচ্চারিত হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর রচিত (হাতে লিখিত) এ সংবিধান গণপরিষদে পাস হয়। এ বছরেরই ১৬ ডিসেম্বরকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বার্ষিকী ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথমবারের মতো 'বিজয় দিবস' উদযাপন করা হয় এবং এর মধ্য দিয়েই কার্যকর হয় সংবিধান।
সূত্রঃ- বাংলাদে প্রতিদিন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন