শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০১১

আওয়ামীলিগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে


মন্ত্রী-এমপি ও দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে দূরত্ব না কমালে আগামী নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের আশঙ্কা ব্যক্ত করলেন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্যরা। বিক্ষুব্ধ সংসদ সদস্যরা বললেন মন্ত্রীরা আমাদের কথাই শোনেন না। আমাদের চেয়ে এলাকার উন্নয়নে মন্ত্রীর পিএস-এপিএসরা অনেক ক্ষমতাবান। সরকারের সঙ্গে বাড়ছে দলের দূরত্ব। এলাকার লোকজনকে কোনো জবাব দিতে পারি না। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে কেউ কেউ দুঃখ করে বলেছেন, আমাদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণেই হয়তো মন্ত্রীদের কাছে গুরুত্ব কম। '৭৩ সালের পরে আওয়ামী লীগে এত সংসদ সদস্য কখনো ছিল না তখন কিন্তু সংসদ সদস্যদের গুরুত্ব ছিল। সংসদ সদস্যদের কেউ কেউ বলেছেন, তুলনামূলক কম আসন পেলেও '৯৬-তে বরং আমরা শক্তিশালী ছিলাম। সরকারও চলেছে স্বাচ্ছন্দ্যে। এবার আসন বেশি পেয়েও সরকারের ভিত্তি অনেকটা দুর্বল।
একজন সংসদ সদস্য কষ্টের কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে আমলাদেরও সমালোচনা করলেন। বললেন এমনও হয়েছে মন্ত্রীদের অবজ্ঞা আর আমলাদের অবহেলায় আমাদের ডিও লেটারও হারিয়ে গেছে মন্ত্রণালয় থেকে। কোনো কাজ হয় না এমপিদের ডিও লেটারে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন কেউ কেউ। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল অনুষ্ঠিত মহাজোটের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে দেওয়া বক্তব্যে দলের একাধিক সংসদ সদস্য এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীও মনোযোগ দিয়ে সবার বক্তব্য শুনলেন, পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে সংসদ সদস্যদের আশ্বস্ত করলেন। সভায় ঢাকার মিরপুর থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকাকে অপসারণ করে সেখানে প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাব করেন। বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এ বৈঠক দুই দফায় চলতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় সংসদ সদস্যরা খোলামেলা বক্তব্য রাখেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১টার পর এ সভা পরিণত হয় মহাজোটের সংসদীয় দলের সভায়। মহাজোটের শরিক দলের সংসদ সদস্যরা আসবেন বলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শুরুতেই মিষ্টি মুখের আয়োজন ছিল। মহাজোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা ক্ষোভের সঙ্গেই বলেছেন জোটে তাদের যথার্থর্ মূল্যায়ন নেই। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাপার নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব দেন না। অথচ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে জাতীয় পার্টির অবদান অনস্বীকার্য। তবে পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষোভ কিংবা অভিযোগের বদলে দরদমাখা কণ্ঠে ঘোষণা করলেন ভাঙনের সুর নয় বরং মহাজোট দাঁড়িয়ে আছে সুদৃঢ় ঐক্যের ওপরে। আগামী নির্বাচনেও মহাজোটের ঐক্যে কেউ চিড় ধরাতে পারবে না বলে অভিমত ব্যক্ত করলেন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রীও বললেন, মহাজোটের সমন্বয় বাড়াতে এখন থেকে নিয়মিত পুনর্মিলনী হবে জোটের শরিকদের। আয়োজন করা হবে মধ্যাহ্ন কিংবা নৈশভোজের। সুখ-দুঃখের আলোচনা হবে সেখানেও। কোনো ভুল বোঝাবুঝি নয়, মহাজোটের ঐক্য ধরে রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বিএনপির জন্ম ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, '৭৫-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে দলটির জন্ম দিয়েছেন। আর বিএনপি অবৈধ বলেই ওনাদের নেত্রী সবকিছুকেই অবৈধ বলে চাপাতে চান। প্রধানমন্ত্রী বলেন সরকার, নির্বাচন কমিশন কিংবা ভোটার তালিকাকে অবৈধ না বলে জনগণের সমর্থনের প্রতি 'ওনার' সম্মান দেখানো উচিত। কারণ জনগণ ভোট দিয়েই আমাদের নির্বাচিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদস্য পদ বাঁচাতেই বিএনপিকে সংসদে যোগ দিতে হবে।
আগামীতে যাতে কেউ ভোট কারচুপি করতে না পারে সেই লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোট পদ্ধতি চালুর কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী দলীয় সংসদ সদস্যদের উদ্দেশে বলেছেন, বিরোধী দল বিভিন্ন ইস্যুতে অপপ্রচার চালিয়ে সরকারকে বিব্রত করছে। তিনি যার যার অবস্থান থেকে বিরোধী দলের অপপ্রচার মোকাবিলার নির্দেশ দেন। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচার করতে হবে। সংসদেও সতর্কভাবে কথা বলতে হবে।

মহাজোটের সংসদীয় দলের এ সভায় অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল, জাতীয় পার্টির মজিবুর রহমান, ড. এটিএম ফজলে রাবি্ব চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের মাযহারুল হক প্রধান, আতিকুর রহমান আতিক, প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন ও ডা. সিরাজুল আকবর বক্তব্য রাখেন।
সভা সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আতিকুর রহমান আতিক বলেন, সরকারের ভিত্তি এখন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে দলের দূরত্ব বাড়ছে, সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। এলাকায় গেলে মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না।
পঞ্চগড় থেকে নির্বাচিত মাযহারুল হক প্রধান বলেন, মন্ত্রীদের কাছে আমাদের গুরুত্ব নেই। ডিও লেটার দিয়েও কাজ হয় না। মন্ত্রী-এমপি দূরত্ব বাড়ছেই। এভাবে চললে আগামীতে কি হবে জানি না।
সুত্রঃ- বাংলাদেশ প্রতিদিন/11,03,2011

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন