শুক্রবার, মার্চ ১১, ২০১১

মহিলা হাজতিদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ


বুধবার। বেলা ৩টা তখনও বাজেনি, মিনিট পাঁচেক বাকি। তেজগাঁও থানার মূল ফটক পেরিয়ে ভবনের সিঁড়িতে পা রাখতেই ডিউটি অফিসারের কক্ষ থেকে অশ্লীল কিছু শব্দ শোনা গেল। গিয়ে দেখা যায়, ডিউটি অফিসার এসআই আবদুল মতিন খিস্তিখেউর করছেন। পাশে বসা এএসআই আব্বাসের পেছনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে চার মহিলা। তাদের উদ্দেশেই আবদুল মতিন শব্দগুলো ছুড়ছিলেন। শব্দবাণে জর্জরিত মহিলারা কাঁদছেন। এসআই মতিন যখন দম নিচ্ছিলেন, এএসআই আব্বাস তখন শুরু করেন, 'আকাম করস, ঠিকানা কইতে পারোস না? আমাগো লগে কথা কইতে লজ্জা লাগে! ওই... (কুরুচিপূর্ণ হওয়ায় ছাপা গেল না) কথা কস না কেন?'
এসআই মতিন এ সময় চিকার করে অফিস ডিউটিকে (কনস্টেবল) ডেকে বললেন, '....গুলারে নিয়া হাজতে ঢুকা'। কনস্টেবল তাদের হাজতখানায় নিয়ে যায়। এ সময় কোনো মহিলা পুলিশকে সেখানে দেখা যায়নি। জানা যায়, নাসরিন, খাদিজা, জাহানারা ও পারুল নামে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়েসী ওই চার জনকে ফার্মগেট এলাকা থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। বুধবার দুপুরে এসআই শাহ আলম তাদের আটক করে থানায় আনেন। শাহ আলম জানান, দীর্ঘদিন ধরেই ওই মহিলারা নানা প্রতারণামূলক কাজ করছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে তারা এ প্রতিবেদককে জানায়, তাদের রাস্তা থেকে ধরে এনেছে পুলিশ। এ বিষয়ে এসআই মতিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এএসআই আব্বাসকে দেখিয়ে দেন। এএসআই আব্বাস এ সময় ইতস্তত করে বলেন, ভাই, শুধু নাম নেন। আর কিছু দেওয়া নিষেধ।
চার মহিলাকে নিয়ে ডিউটি অফিসারের কক্ষে খিস্তিখেউর চলাকালে সাদা পোশাকে আরেক এএসআই কালাম প্রবেশ করেন। তাকে দেখেই এসআই মতিন বলেন, 'কি ব্যাপার! আপনার মক্কেল তো আপনারে খুঁজতাছে। থানায় ঘুরঘুর করতাছে দুপুর থেকে। আপনার খবর নাই। দেখেন, কেমনে কী করবেন। যাই করবেন, বুইঝা শুইনা কইরেন।' এএসআই কালাম তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বললেন। এসআই মতিন হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লে তিনি আয়েশী ভঙ্গিতে কক্ষ ত্যাগ করেন। মূল ভবনের সিঁড়ির কাছে এ সময় কনস্টেবল রাশিদুল হেঁটে হেঁটে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। তার পেছন পেছন হাঁটছিলেন ২৭-২৮ বছরের এক যুবক। পেছন পেছন হাঁটার জন্যে বার কয়েক ধমকও দেওয়া হয় যুবকটিকে। জিগাতলার মিশুক চালক ওই যুবকের নাম সাগর। তিনি জানান, গত ৩ মার্চ রাতে কারওয়ান বাজার এলাকায় তার মিশুকের কাগজপত্র জব্দ করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন থেকে তিনি তেজগাঁও থানায় আসছেন কাগজের জন্য। প্রধান ফটকের ভেতরে প্রবেশ করতে পারলেও মূল ভবনে ঢুকতে পারেননি পাঁচ দিনেও। প্রতিদিনই ভবনের সামনে তাকে আটকে দেওয়া হয়। এক কনস্টেবল তার কাছে টাকা চেয়েছিলেন, কিন্তু দিতে পারেননি। যে কারণে কাগজপত্র উদ্ধার দূরের কথা জব্দ করে নিয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তার নাম পর্যন্ত জানতে পারেননি তিনি।
সূত্রঃ-বাংলাদেশ প্রতিদিন/11,03,2011

1 টি মন্তব্য: